সোমবার ২০ মে ২০২৪
Online Edition

সরকারি দৌলতপুর মুহসিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে

খুলনা অফিস : দেড়শ’ বছর ধরে খুলনার দৌলতপুর মুহসিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় জ্ঞানের আলো জ্বালিয়ে যাচ্ছে। ১৮৬৭ সাল থেকে এ অঞ্চলের পুরানো এ বিদ্যাপীঠ এলাকার মানুষের মাঝে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে আসছে।
সৈয়দপুর ট্রাস্ট এস্টেট কাছারী (হাজী মুহাম্মদ মুহসিন এস্টেট) তখন দৌলতপুরে অবস্থিত ছিল। এ এস্টেটের ম্যানেজার ক্ষেত্র গোপাল বন্দোপাধ্যায় এখানেই থাকতেন। তিনি স্থানীয় প্রজাবৃন্দ সাধারণ লোকের ছেলেদের শিক্ষার জন্য এ অঞ্চলে একটি এ্যাংলো ভার্নাকুলার স্কুল খোলার পরিকল্পনা করে তৎকালীন এস্টেটের ইনচার্জ ডেপুটি কালেক্টর ব্রহ্মনাথ সেনের সাথে আলাপ আলোচনা করেন। তিনি এই মহৎ কাজটির বাস্তবায়নের ভার ম্যানেজার বাবুর ওপর অর্পণ করেন। তিনি মোটেই কাল বিলম্ব না করে আর্থিক সংকটের কথা না ভেবে ১৮৬৭ সালে ২ ফেব্রুয়ারি স্কুলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন। প্রাথমিকভাবে তৎকালীন প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী বাবু গৌরমোহন সাহার দোকানের কামরায় স্কুলের ক্লাস নির্ধারিত হয়। ৫৪ জন ছাত্র নিয়ে স্কুলের কার্যক্রম শুরু হলো। পরবর্তীতে যেহেতু ভারত উপমহাদেশের প্রখ্যাত দানবীর হাজী মুহাম্মদ মুহসিনের এস্টেটের জায়গায় স্কুলটি স্থাপন করা হয় সেহেতু সবদিক বিবেচনা করে সর্বসম্মতিক্রমে এই মহান দানবীরের নামেই স্কুলটির নামকরণ করা হয়। স্কুলটি সুনামের কারণে ১৮৯৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী স্বীকৃতি লাভ করে। ১৮৬৭ সালে ৫ জুলাই এ স্কুলের সর্বপ্রথম প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন অভয় কুমার সেন। বর্তমানে এ স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসাবে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করছেন মো. শহীদুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার। এ পর্যন্ত এই স্কুলের মোট ২৯ জন প্রধান শিক্ষক বিভিন্ন মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিদ্যালয়টি গত ১৯৮১ সালে ১ জানুয়ারি এমপিওভুক্ত হয়। বর্তমানে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত কারিগরি, কম্পিউটার শাখাসহ মোট শিক্ষার্থী ৮৫৬ জন। শিক্ষক আছেন ১৬ জন। আর কর্মচারী আছেন ৫ জন। তিন দশমিক ১৫ একর জায়গায় প্রতিষ্ঠিত স্কুলটিতে আছে চারটি দ্বিতল বিশিষ্ট বড় ভবন, একটি একতলা ভবন সমন্বয়ে মোট ৩৭টি কক্ষ। আরও আছে এতদাঞ্চলের সুপরিচিত ঐতিহ্যবাহী মুহসিন স্কুল খেলার মাঠ। আছে লাইব্রেরী বিজ্ঞানাগার, মাল্টিমিডিয়া কক্ষ, মসজিদ আর স্কুলের জায়গায় ৩০টি দোকান।
প্রাচীন এই মুহসিন স্কুলের পরীক্ষার ফলাফল বরাবরই ভাল। ১৯৬৩ সালে যশোর বোর্ডে প্রথম স্থান অধিকার করে মেধাবী ছাত্র আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ। তাছাড়া ২০১৬ জেএসসি পরীক্ষায় শতভাগ পাস করে এবং এসএসসিতে ৯৭ দশমিক ১৯% পাস করে। লেখাপড়ার পাশাপাশি ক্রীড়ায়ও বেশ সুনাম বয়ে এনেছে স্কুলটির কৃতী ছাত্ররা। জাতীয় এথলেটস এ এবং আন্তঃস্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় শেখ আব্দুল হামিদ, শেখ রুহুল আমিন, জহুর আহম্মেদ, গাজী জহুরুল হক বাচ্চু, একাধিকবার বিভিন্ন ইভেন্টে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত হয়ে প্রশংসা অর্জন করেছেন। এ ছাড়া জাতীয় পর্যায়ে গত পাঁচ বছরে পর্যায়ক্রমে শ্রেষ্ঠ বিএনসিসি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে এই মুহসিন স্কুল। এ স্কুল থেকে লেখাপড়া করে দেশে-বিদেশে বড় বড় পদে চাকরি করছেন অনেকে। তার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক আ.আ.ম.স আরেফিন সিদ্দিক, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহ, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আব্দুর রশিদ, ব্রিটিশ আমলের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট মরহুম মির্জা ইব্রাহিম হোসেন, স্বর্ণপদক সাহিত্যরতœ মরহুম ডা. আবুল কাসেম, বহুমুখি প্রতিভার অধিকারী সাহিত্যিক-সাংবাদিক কাজী আব্দুল খালেক, স্পেনে অবস্থানরত বিএল কলেজের সাবেক ভিপি মির্জা রেজাউল ইসলাম তপন, বিজেএর সভাপতি শেখ সৈয়দ আলী, বিশিষ্ট পাট ব্যবসায়ী শেখ আব্দুল মান্নান প্রমুখ।
মূলত ১৯৮৭ সাল থেকে ১৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই দৌলতপুর মুহসিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টিকে সরকারীকরণ করার চেষ্টা করেছেন অনেক প্রভাবশালী রাজনীতিক, মন্ত্রী, এমপি। স্কুলে এসেছেন, দেখেছেন সরকারিকরণের আশ্বাস দিয়েছেন। তার মধ্যে সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, সাবেক মন্ত্রী লে. কর্নেল এম,এ গফফার, সাবেক হুইপ মো. আশরাফ হোসেন উল্লেখযোগ্য। বর্তমান সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপি-র ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি স্কুলটি জাতীয়করণ হয়েছে।
একদিকে জাতীয়করণ অন্যদিকে ঐতিহ্যের গৌরবের ১৫০ বছর পূর্তি উদযাপন হতে যাচ্ছে ২০১৭ সালের মার্চ মাসে। এ উপলক্ষে নেয়া হচ্ছে ব্যাপক কর্মসূচি ও প্রস্তুত। গঠন করা হয়েছে একাধিক উপ-কমিটি। তারা দিন-রাত কাজ যাচ্ছে। অপেক্ষায় আপেক্ষমান আনন্দের উচ্ছ্বাসের এই শুভ দিনটির প্রত্যয় হোক সেই চিরচেনা, চিরজানা বাণীসম কথা, ‘এসো জ্ঞানের স্থানে ফিরে যাও দেশের কল্যাণে’

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ